গর্ভাবস্থায় শরীল দুর্বল হলে করণীয়

 প্রিয় পাঠক আপনি কি গর্ভাবস্থায় শরীল দুর্বলতার কারণ সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গাতে ক্লিক করেছেন। কারণ এই পোস্টটিতে গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বলতার সকল কারণগুলো আলোচনা করা হয়েছে। 

তাই আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে আমি আশা করি আপনার এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় শরীল দুর্বলতার গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যগুলো জানতে পোস্টটি পড়তে থাকুন।

সূচিপত্রঃ

গর্ভাবস্থায় শরীল দুর্বলতার কারণঃ 

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভধারিনী মায়ের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। যার কারনে গর্ভধারিনী মায়ের শক্তি কমিয়ে ফেলে অবসাদ ও দুর্বলতার সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় মূলত শরীরের বিভিন্ন হরমোন যেমন: ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন এর পরিবর্তনের কারণে দুর্বলতা বা ক্লান্তির অনুভব হয়। 

এছাড়াও গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে গর্ভধারিন মায়ের শরীরের ওজন বেড়ে যায় বলে শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি লাগে। এসব ছাড়াও মায়ের শরীর দুর্বলতার পিছনে দৈহিক কিছু কারণ থাকতে পারে যার ফলে গর্ভাবস্থায় শরীরে দূর্বলতার সৃষ্টি করে। যেমন:

  • আইরনের অভাব।
  • রক্তশূন্যতা।
  • রক্তে সুগার  কম হওয়া।
  • বদ হজম সমস্যা।
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া।
  • বমি হওয়া।
  • নিদ্রাহীনতা বা ঘুম না হওয়া।
  • দুশ্চিন্তা করা।
  • মানসিক চাপ।

গর্ভাবস্থায় দুর্বলতার প্রতিকারঃ

গর্ভকালীন সময়ে যে শারীরিক দুর্বলতা বা ক্লান্তির সৃষ্টি হয় তা থেকে প্রতিকার পেতে যে কাজগুলো গর্ভধারিনী মাকে করতে হবে তা হলঃ

  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা।
  • দুশ্চিন্তা কমানো।
  • ক্যাফেইন এবং চিনি কম খাওয়া।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়া। 
  • নিয়মিত ঘুমানো।

উপরের এ বিষয়গুলো নিয়ে এখন বিশ্লেষণ ভাবে আলোচনা করব দয়া করে মনোযোগ সহকারে লেখাগুলো পড়বেন।

পুষ্টিকর খাবারঃ পুষ্টিকর খাবার গর্ভধারিনী মাকে সারাদিন শক্তি সরবরাহ করে, ফলে শরীরের দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি প্রোটিন ও শর্করা সমন্বয়ে তৈরি খাবার দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি যোগায়, তাই গর্ভধারিনী মা তার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাচ্ছে কিনা তা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। 

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য কেমন ল্যাপটপ প্রয়োজন।

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভধারিণী মা তার সকল খাবার ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব হয়, তাই খাবার সময় বমি হলে খাবার একবারে না খেয়ে দিনে কয়েকবার অল্প অল্প করে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যাতে  শরীরের সঠিক পুষ্টি ও রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকে। ফলে গর্ভধারিণী মায়ের শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করবে। গর্ভকালীন সময়ে যে সুষম খাবার গুলো বেশি খাবেন তার তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ

  • শর্করা জাতীয় খাবার।
  • গাড় সবুজ ও রঙ্গিন শাক।
  • রঙ্গিন ফল ও সবজি।
  • ডিম।
  • দুধ।
  • মাছ।
  • মাংস।
  • ডাল।

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ গর্ভাবস্থায় দৈনিক দুই থেকে তিন লিটার বা আট থেকে বার ক্লাস পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে গর্ভধারিনী মা ও তার সন্তানের জন্য খুবই উপকারী। যা গর্ভাবস্থায় গর্ভধারিনী মার শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে। 

দুশ্চিন্তা না করাঃ গর্ভধারিণী মায়ের দুর্বলতা ও ক্লান্তির সৃষ্টি করতে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা প্রভাব ফেলে। তাই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। সেজন্য আপনাকে রিল্যাক্স বা আরাম দায়ক এমন কিছু করতে হবে। যেমন:

  • আপনার শখের কাজগুলো করা।
  • গান শোনা বা গল্প কবিতার বই পড়া।
  • বিনোদনমূলক ভিডিও দেখা।
  • বন্ধু ও বান্ধবীদের সাথে ফোনে কথা বলা।
  • পরিবারের মানুষদের সাথে গল্প করে সময় কাটানো।

ওপরের এই বিষয়গুলো যা আপনাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করে রাখতে সাহায্য করবে।

ক্যাফেইন বা চিনি কম খাওয়াঃ দুর্বল অনুভব করলেই অনেকে ক্যাফেইন ও চিনিযুক্ত খাবার খান চা আপনার শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি যোগালেও এগুলো পরবর্তীতে আপনার ঘুমের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যাঘাত ঘটাবে। যার কারণে আপনার শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা আরো বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

প্রয়োজন মতো বিশ্রাম নেওয়াঃ শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি মূলত শরীরের যে এখন বিশ্রামের প্রয়োজন তাকে নির্দেশ করে। তাই এ সময়ে দৈনিক কাজগুলো করতে ও আপনার পরিশ্রম কমাতে যতটা সম্ভব আপনার পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। কোনভাবেই আপনার সহ্যক্ষমতা বা ধারণ ক্ষমতার বেশি পরিশ্রম করতে যাবেন না। 

যার ফলে আপনার অধিক বিশ্রামের প্রয়োজন পড়বে যা আপনার ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া কিংবা কাজের মাঝেমাঝে ১০থেকে ১৫ মিনিট পা তুলে বিশ্রাম নিবেন। আপনি যদি কর্মজীবী নারী হন তাহলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্য চেয়ারে বা টুলে দুই পা তুলে বসে বিশ্রাম নিবেন যাতে পরবর্তী সময়ে গর্ভকালীন অবস্থায় পায়ে পানি আসা রোধে সাহায্য করবে।

নিয়মিত ঘুমানোঃ সাধারণত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমকে আদর্শ ঘুম বলা হয়। তাই গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে, যাতে সারাদিন আপনাকে সতেজ রাখে। নিয়মিত ঘুমানোর জন্য আপনাকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন আর দিনে কম ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। যাতে করে রাতে ঘুমটা আপনার ভালো হয়।

গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন কখন হবেনঃ

 গর্ভধারিনী মায়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। যার মাধ্যমে গর্ভধারিনী মা ও তার সন্তান উভয়ই সঠিকভাবে সুস্থ থাকার নির্দেশনা গুলো জানতে পারে। তাই নিচের কারণগুলো লক্ষ্য করলে অবশ্যই আপনারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

  • পেটের অপরিভাগে ব্যথা হলে।
  • বুক ধরফর করলে।
  • মাথা ঘোরানো বা অজ্ঞান হয়ে গেলে।
  • থাইরয়েডের সমস্যা হলে।
  • চেহারা ফ্যাকাশা হয়ে গেলে।
  • অস্বাভাবিক পিপাসা অনুভব করলে।
  • পছন্দ মাথা ব্যথা করলে।
  • শ্বাসকষ্ট অনুভব হলে।
  • পায়ের পাতা ফুলে গেলে।
  • চোখের সমস্যা হলে।

মাস অনুযায়ী গর্ভকালীন সমস্যাঃ 

গর্ভকালীন সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে সে বিষয়গুলো নিচে আলোচনা করা হয়েছে আশা করি আপনারা এ বিষয়গুলোকে খুবই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

প্রথম ত্রিমাসিকঃ প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কে প্রথম ত্রিমাসিক সময় ধরা হয়। আর এ সময়ে গর্ভধারিনী মায়ের শারীরিক বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। যেমনঃ

  • হরমোনাল পরিবর্তন:প্রোজেস্টেরোন নামক হরমোন এ সময়ে অনেক বৃদ্ধি পায় যার কারণে গর্ভধারিনী মায়ের শরীরে শারীরিক ও মানসিক ঘটে।
  • রক্ত সরবরাহ: গর্ভের শিশুর জন্য পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করতে গর্ভধারিনী মায়ের শরীরে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে গর্ভধারিনী মায়ের শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তির সৃষ্টি হয়।
  • অন্যান্য পরিবর্তনঃ হার্ডরেড ও হৃদপন্দন বৃদ্ধি ও রক্তের সুগার কমে যাওয়ার কারণে শরীরের দুর্বলতা হয়।

দ্বিতীয় ত্রিমাসিকঃ প্রথম ত্রিমাসিক শেষে গর্ভধারিনী মায়ের শারীরিক যে পরিবর্তনগুলো হয় তা ধীরে ধীরে আপনার শরীরে মানিয়ে নিতে শুরু করবে। যার কারণে প্রথম তিন মাসের তুলনায় আপনি কম দুর্বলতা ও ক্লান্তিতে ভুগবেন না বাকি তিন মাস। কিন্তু শেষের তিন মাস এর জন্য আপনাকে আরো অ্যাডভান্সলি সচেতন এবং ধৈর্যশীল হতে হবে কেননা গর্ভকালীন সময় গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শেষের তিনটি মাস।

শেষ ত্রিমাসিকঃ গর্ভকালীন সময়ের মধ্যে শেষ ত্রিমাসিক সময়ে আপনার দুর্বলতা ও ক্লান্তি আবারো প্রবলভাবে ফিরে আসতে পারে। কেননা এ সময়ে গর্ভের শিশু দ্রুতগতিতে বড় হয় যার কারণে পেটের আকার বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন করতে আপনার জন্য কষ্টকর ও ক্লান্তিদায়ক হয়ে ওঠে।

এ সময়ে গর্ভধারিনী মায়ের বধ হজম, বুক জ্বালাপোড়া করা ও নিদ্রাহীনতা সমস্যা হতে পারে। যার ফলে গর্ভধারীনি মা এর ক্লান্তি ও দূর্বলতার সৃষ্টি হয়।

সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া নিয়ে হবু মা মানসিক চাপের উপর থাকে ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে শরীরের ক্লান্তির সৃষ্টি হয়।

গর্ভাবস্থায় অভিভাবকদের করণীয়।

গর্ভকালীন সময়ে যে শুধুমাত্র গর্ভধারিনী মায়ের ভূমিকা থাকে তা নয়। এর পাশাপাশি তার সকল অভিভাবকদের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস এ দুটি সময়ে গর্ভধারিণীর পাশে থাকতে অভিভাবকদের গুরুত্ব অপরসীম।

গর্ভধারিনী মাকে তার খাদ্যভাস এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়ানো ও খাবার খাচ্ছে কিনা তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা। কোন প্রকার অধিক ভারী সম্পন্ন কাজ করা থেকে বিরত রাখা এবং শেষ তিন মাসে গর্ভধারীনির সাথে সব সময় একজন থাকা। 

গর্ভধারণের শেষ সময়ে সকল কিছুর আগে থেকে পদক্ষেপ রাখা যেমন ডাক্তারের সাথে সবসময় কমিউনিকেশন রাখা, অ্যাম্বুলেন্স এর সাথে যোগাযোগ রাখা এমনকি আগে থেকেই সকল স্টেপগুলো ফিলাপ করে রাখা। যাতে করে অতিদ্রুততার সাথে রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারে এবং সময় মতন সঠিক চিকিৎসা দ্বারা ডেলিভারি সম্পন্ন করা ।
লেখকের মন্তব্যঃ 

প্রিয় পাঠক আশা করছি গর্ভবস্থায় শরীর দুর্বলতাকারণ বিষয়ক সকল তথ্যগুলো আপনি ভালোভাবে বুঝতে এবং জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। যদি আমার লেখা এই পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে দয়া করে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

আরো পোষ্টের তালিকাঃ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেইন ওয়েব জোনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।কারণ প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url