নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা

আপনি কি নিম পাতা রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি একদম সঠিক পোস্টে ক্লিক করেছেন। কারণ-আজ আমি এ আর্টিকেলে নিম পাতার রস খাওয়ার ২২ টি উপকারিতা ও ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা এবং নিমপাতা মুখে দিলে কি হয় এ সকল বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব। 

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা

আপনি যদি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে আমি আপনাকে গ্যারান্টি সহকারে বলতে পারি, নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা কি, খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা কি, ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা সহ নিম পাতা সম্পর্কিত যাবতীয় সকল বিষয়গুলো আপনি সঠিকভাবে জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে থাকা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ-নিমপাতা এমন একটি উপকারী বস্তু, যা মানব জীবনকে সুস্থ রাখতে তার ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে নিম গাছের জুড়ি মেলা অসম্ভব, কারণ নিম গাছ এমন একটি ঔষধি গাছ যার শিকড়, ছাল, ডাল ও পাতা সবকিছুই মানবজীবনের উপকারে আসে। 

আরোপড়ুনঃ অর্জুন গাছের ছাল খেলে কি হয় জেনে নিন

তাছাড়াও মানব জীবনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিমপাতা অনেক বেশি কার্যকরী। তাই আজ এ পোস্টে নিম পাতার রস খেলে কি হয় এবং নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। যাতে আপনি নিম পাতার সকল উপকারিতা বিষয়গুলো জানতে পারেন এবং আপনার জীবনকে রোগ মুক্ত করে সুস্থ রাখতে পারেন। 

তো চলুন নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনি আপনার জীবন থেকে কোন কোন রোগ গুলো চিরতরে নিরাময় করতে পারবেন এবং কোন রোগের জন্য নিম পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করি। 

রক্ত পরিষ্কার করতেঃ আপনি যদি নিয়মিত কয়েকদিন নিমপাতার রস সেবন করেন তাহলে আপনার রক্ত জনিত সমস্যা দূর হবে। নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিম পাতা রসের বিকল্প নেই।

ঠান্ডা জনিত বুকের ব্যথাঃ ঠান্ডা জনিত কারণে বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করলে নিম পাতার রস সেবন করায় অতি দ্রুত বুকের ব্যথা কমে যায়। এ সমস্যায় আপনি নিয়মিত কয়েকদিন ২৫- ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার খাবেন।

জন্ডিস নির্মূল করেঃ জন্ডিস রোগ নির্মূল করতে নিম পাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ নিমপাতার রসের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে খান, তাহলে আপনার জন্ডিস রোগ নির্মূল হবে। জন্ডিস পুরোপুরি নির্মল করার জন্য আপনাকে এভাবে ৭-১০ দিন খেতে হবে।

ওজন কমাতেঃ পেটের ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে নিম পাতার রস ও মিমের ফুল। আপনি যদি এক মুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে নিয়ে এর সাথে এক চামচ মধু ও আধা চামচ লেবুর রস এবং এক চামচ নিম পাতার রস ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান তাহলে আপনার পেটের ওজন দ্রুত কমে যাবে।

ডায়াবেটিস নির্মূল করতেঃ নিম পাতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার কাজ করে থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন খালি পেটে নিমের কচি পাতার রসের সাথে পাঁচটি গোলমরিচ বেটে খান তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নির্মূল করবে।

পেটের সমস্যাইঃ আপনি যদি প্রতিদিন ২৫-৩০ ছোটা নিম পাতার রস এক কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে খান তাহলে আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে। পেট পরিষ্কার রাখতে এবং পাতলা পায়খানা দূর করতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে থাকে।

পেটের কৃমি দূর করতেঃ পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি ৫০ গ্রাম নিম গাছের মূলের ঝালের গুড়া এবং নিম পাতার রস একসঙ্গে গরম জলের সাথে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খান তাহলে অতি দ্রুত পেটের কৃমি দূর হবে।

ভাইরাস জনিত সমস্যাঃ নিম পাতার রস ভাইরাসজনিত সমস্যা দূর করতে ব্যাপক কার্যকরী। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত ১০-১৫ ফোটা নিম পাতার রস সেবন করেন তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সমস্যা দূর করবে এবং আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

দাঁতের সমস্যাইঃ দাঁতের বিভিন্ন রোগ যেমন-দাঁতের পচন, রক্তপাত, মাড়ির ব্যথা এবং দাঁত কে মজবুত করতে নিম পাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি নিয়মিত নিমপাতার গুড়া কিংবা কচি নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজেন তাহলে আপনার দাঁতের মাড়ি অত্যন্ত মজবুত হবে। আর ৭ থেকে ১০ দিন ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম জলে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার খেলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।

এলার্জি দূর করেঃ এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। আপনি যদি প্রতিদিন নিম পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সে জল দিয়ে স্নান করেন। তাহলে আপনার এলার্জিজনিত সমস্যা ১০০% নির্মল হবে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসঙ্গে পেস্ট করে শরীরে লাগালেও এলার্জি ভালো হয়।

চুলকানিঃ চুলকানি জনিত সমস্যাই নিম পাতা অত্যান্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি নিমপাতা ভেজে গুড়া করে সে গুড়া সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে চুলকানিজনিত স্থানে লাগান তাহলে অনেক দ্রুত সে চুলকানি ভালো হবে। এছাড়াও নিমপাতা বা নিমের ফুল পেস্ট করে কয়েকদিন চুলকানিজনিত স্থানে লাগালে চুলকানি ভালো হয়।

খোস পাচড়াঃ শরীরের বিভিন্ন ধরনের খোস পাচড়া নিমিষেই দূর করতে নিম পাতা মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনি যদি নিমপাতার সাথে অল্প পরিমাণ কাঁচা হলুদ বেটে সে আক্রান্ত স্থানে ৫- ১০ দিন ব্যবহার করেন, তাহলে খোশ পাঁচরা অতি দ্রুত ভালো হয়। এছাড়াও নিমপাতা গরম জলের সঙ্গে সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে নিয়মিত স্নান করলেও খোশ পাচরা দূর হয়।

ক্ষত বা ঘাঃ শরীরের ক্ষত বা ঘা সারাতে নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকরী। নিমপাতা খাটি ঘিয়ের সাথে ভেজে সেই ভাজা ঘি ক্ষত বা ঘা জনিত স্থানে নিয়মিত কয়েকদিন লাগালে অতি দ্রুত ভালো হয়।

ত্বকের সমস্যাঃ মিমের পাতায় ভাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই আপনি যদি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বককে মশ্চারাইজার করতে চান তাহলে আপনাকে নিম পাতার রস বা নিমপাতা বাটা বড়ি খেতে হবে। সেজন্য আপনাকে কিছু নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। তারপর সেগুলোকে হাতের সাহায্যে ছোট ছোট পরী আকারে তৈরি করতে হবে। সেগুলোকে ফ্যানের বাতাসে একদিন রেখে পরের দিন রোদে শুকাতে হবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিম পাতার রস ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি নিম পাতার রসের সঙ্গে কাঁচা হলুদ বেটে ত্বকে লাগান তাহলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের ব্রণঃ মুখের ব্রণ দূর করতে নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি নিম পাতার গুঁড়ো এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে আপনার ত্বকে লাগান তাহলে মুখের ব্রণ দ্রুত ভালো হয়। সেজন্য আপনাকে প্রথমে নিম পাতাকে রোদে শুকিয়ে তারপর সে পাতাগুলোকে সুন্দরভাবে গুড়ো করতে হবে। তারপর সে গুড়োর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন বা ব্রণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে।

শরীরের দুর্গন্ধঃ শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি প্রতিদিন নিমপাতা এবং বেল পাতা সিদ্ধ করা জল দিয়ে স্নান করেন তাহলে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ নির্মূল হয়ে যাবে।

ইনফেকশনঃ ইনফেকশন জনিত সমস্যা দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। নিমপাতায় নিন্বিডল ও জেডুনিন থাকায় ভাঙ্গাস ধ্বংস করতে পারে। আপনি যদি নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে কয়েক ফোটা নিমের তেলের সাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার লাগান তাহলে আপনার ইনফেকশন জনিত সমস্যা অতি দ্রুত নির্মূল হবে।

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিঃ চুলের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বল এবং চুলকে মসৃণ করতে নিম পাতার অত্যন্ত কার্যকারিতা রয়েছে। আপনি যদি প্রতি সপ্তাহে একদিন নিমপাতা বেটে চুলে লাগান এবং এক ঘন্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলেন তাহলে আপনার চুল পড়া কমবে এবং চুল নরম ও কমল হবে। এছাড়াও আপনি যদি মধু ও নিমপাতা রস একত্রে মিশিয়ে এক সপ্তাহে তিন দিন চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগাতে পারেন তাহলে আপনার চুল আরও বেশি ঝলমলেও সুন্দর হবে। আপনি যদি মনে করেন এর থেকেও আরো বেশি চুলের উপকারিতা নিবেন তাহলে এক চামচ নিম পাতার রস, এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ আমলকি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টক দই এর সঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে দুইদিন তুলে লাগাতে পারেন।

মাথার খুশকি নির্মূলঃ মাথার খুশকি নির্মূল করতে নিম পাতার ভূমিকা অপরশীম। তিন থেকে চার কাপ জলের সঙ্গে এক মুঠ নিমের পাতা গরম করতে হবে যতক্ষণ না জলটা সবুজ বর্ণ ধারণ করছে। তারপর চুলে শ্যাম্পু করার পর সে জল ঠান্ডা করে সে জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। আপনি যদি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এ নিয়মে নিমপাতা ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মাথার খুশকি ১০০% দূর হবে।

মাথার উকুন নির্মূলঃ মাথার উকুন নির্মল করতে নিম পাতা এবং নিমের ফল অত্যান্ত কার্যকরী। আপনি যদি নিমপাতা রস এবং নিমের ফল এক সঙ্গে বেটে পেস্ট করে তারপর মাথার মাসে ব্যবহার করেন এবং তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলেন তাহলে আপনার মাথার উপর নির্মল হবে। সপ্তাহে মিনিমাম ২ থেকে ৩ বার ২ মাস এভাবে নিম পাতার ব্যবহার করতে হবে।

চোখের রোগঃ চোখের রোগ যেমন- চোখে চুলকানি বা ইনফেকশন এবং চোখে যেকোনো কারণে লাল কিংবা ব্যথা করলে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। তার জন্য আপনাকে একমুঠো নিম পাতা জলে দিয়ে ১০মিনিট সিদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর সে জলটি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঠান্ডা হলে সে জল দিয়ে চোখে ভালোভাবে ঝাপটা দিতে হবে।

বাত ও ব্যথাঃ বাত ও ব্যাথা সাড়াতে নিমপাতা ও নিমের বীজ এবং নিম গাছের বাকল মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি এ উপাদানগুলো একসঙ্গে বেটে তারপর আপনার ব্যথায় স্থানে লাগান তাহলে অতি দ্রুত এ সমস্যা দূর হবে।

একজিমাঃ একজিমা দূর করতেও নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকর। যে সকল স্থানে একজিমা জনিত সমস্যা রয়েছে সে সকল স্থানে আপনি যদি নিম পাতা বেটে লাগান তাহলে অতি দ্রুত এই সমস্যা ভালো হবে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ আপনি যদি প্রতিদিন ৫- ১০ গ্রাম নিম পাতার রস এবং এক চামচ মধু প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার শরীরকে সুস্থ এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে।

ওপরের আলোচিত বিষয় গুলো আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন। তাহলে আপনি অবশ্যই নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা গুলো জানতে পেরেছেন। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব নিমপাতা খাওয়ার আরো কিছু নিয়ম সম্পর্কে।

নিম পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আপনি যদি নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে থাকেন। তাহলে নিম পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণ-নিম পাতার সঠিক উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে। তাছাড়া আপনারা অবশ্যই জানেন যে, কোন কিছুই অতিমাত্রায় সেবন করলে উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই নিম পাতা সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। তো চলুন নিম পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং কিভাবে খাবেন এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করি।

  • নিম পাতার সঠিক কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনি সকালে খালি পেটে খাবেন।
  • আপনার রোগের উপর নির্ভর করে নিমপাতা খাওয়া এবং পরিমাণটুকু নির্ভর করবে। যা উপরের নিম পাতার উপকারিতা বিষয়গুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • আপনার রোগের ওপর নির্ভর করে অবশ্যই নিম পাতার পাশাপাশি অন্যান্য যে উপাদান গুলো প্রয়োজন তা অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
  • নিমপাতার সঠিক গুনাগুন পাওয়ার জন্য আপনি অবশ্যই সকালে খালি পেটে নিমপাতা চিবিয়ে খাবেন।
  • অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে নিম পাতা আলাদা স্বাদ এবং তিতা হয়ে থাকে। যার ফলে আপনি যদি চিবিয়ে না খেতে পারেন, তাহলে আপনি নিম পাতা ঢুকিয়ে গুড়ো করে তারপর পানির সাথে কিংবা চিনি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আপনি যদি মনে করেন নিমপাতার ছোট ছোট ট্যাবলেট হিসেবে তৈরি করেও খেতে পারেন। সেজন্য আপনাকে নিম পাতা ভালোভাবে বেটে সে গুলোকে ছোট ছোট ট্যাবলেট এর মত তৈরি করে রোদে শুকিয়ে পরবর্তীতে পানির সাথে ট্যাবলেট এর মতো করে খেতে পারেন।

ওপরের আলোচিত বিষয় গুলো থেকে আপনি অবশ্যই নিম পাতার উপকারিতা এবং নিমপাতা সেবন ও সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার জেনে থাকা খুবই জরুরী। কারণ-নিমপাতা এমন একটি ভেষজ ওষুধ যা আপনি যেভাবেই সেবন করে থাকেন না কেনো অবশ্যই সে কাজ করবে। তারপরও আপনি যদি নিম পাতার রস সকালে খালি পেটে খান, তাহলে সব থেকে বেশি কাজ করে থাকে। তো চলুন খালি পেটে নিমপাতা রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করি।

  • আপনি যদি নিয়মিত নিম পাতার রস খালি পেটে ৫ থেকে ১০ ফোটা সেবন করেন। তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে আপনার শরীর হবে রোগমুক্ত এবং শক্তিশালী। 
  • নিম পাতার রসে শক্তিশালী যৌগিক উপাদান থাকায় যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া করতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও আপনি যদি খালি পেটে নিম পাতার রস খান তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যন্ত কার্যকর। 
  • খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনার দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। 
  • যারা কোলেস্টেরলের সমস্যাই ভুগছেন তারা নিয়মিত নিম পাতার রস সেবন করলে অতি দ্রুতই এ রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। সেজন্য আপনাকে প্রতিদিন নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে এর রস সকালে খালি পেটে খেতে হবে। 
  • খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আপনার পাকস্থলীতে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি দ্রুত নির্মূল করা সম্ভব।

ওপরের আলোচিত বিষয় থেকে আপনি অবশ্যই জানতে পেরেছেন খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব ত্বকের যত্নে কিভাবে নিমপাতা ব্যবহার করবেন।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

ত্বকের যত্নে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতে অবশ্যই নিমপাতা ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের প্রত্যেকের সৌন্দর্যের পেছনে ত্বক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার যদি ত্বকে কোন ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আপনার সেই সৌন্দর্যটা নষ্ট করে ফেলে। 

আরোপড়ুনঃ হরতকি ফলের উপকারীতা ও অপকারীতা জেনে নিন

আর ত্বকের যত্নে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে আমাদের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রণের মত সমস্যা সৃষ্টি হয়। এবং রোদের তাপ ও ধুলোবালির কারণে আমাদের ত্বক অনেক সময় উজ্জ্বলতা নষ্ট করে ফেলে। তাই আপনার ত্বককে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনি নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। তো চলুন ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা শুরু করি।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা

বর্তমান সময়ে ত্বকের সমস্যা জনিত রোগের মধ্যে সবথেকে বেশি হয়ে থাকে ব্রণ। আর এ ব্রণ এবং ত্বকের তেলাক্ত ভাব দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। তাই আপনাদের ত্বকের ব্রণ জনিত সমস্যাটি দূর করার জন্য আপনি অবশ্যই নিমপাতা ব্যবহার করবেন। তো চলুন ত্বকের ব্রণ দূর করার জন্য আপনি নিম পাতা কোন কোন উপায়ে ব্যবহার করবেন সে বিষয়গুলো জেনে নেই-

  • নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ এবং ত্বকের তেলাক্ত ভাব দূর হবে। এছাড়াও আপনি নিমপাতা জলের সঙ্গে সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধোয়ার ফলেও ত্বকের ব্রণ ভালো হয়।
  • নিমপাতার সঙ্গে চন্দন ও গোলাপজল এবং তুলসী পাতা একসাথে মিশিয়ে সেগুলোকে ভালোভাবে পেস্ট করে, সেই পেস্ট ব্রণের উপরে লাগালে মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ অতি নিমিষেই দূর হয়।

উপরের বিষয় থেকে আপনি জানতে পেরেছেন ত্বকের ব্রণ দূর করতে নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব নিমপাতা বেশি দিন সংরক্ষণ করার উপায় কি সে সম্পর্কে।

নিমপাতা বেশি দিন সংরক্ষণ করার উপায়

আপনি যদি নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই নিমপাতা বেশি দিন সংরক্ষণ করার উপায় সম্পর্কে জেনে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ-নিমপাতা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে নিমপাতা প্রতিদিন নিয়মিত সেবন করা এবং ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। 

আর সেজন্যই আমাদেরকে নিমপাতা বেশি দিন সংরক্ষণ করার উপায় গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। তো চলুন কোন কোন উপায়ে আপনি নিমপাতা বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন সে উপায়গুলো জেনে নেই-

  • নিম পাতা রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর গুড়ো করে রাখলে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়।
  • নিম পাতার গুড়ার কার্যকারিতা বেশিদিন ধরে রাখার জন্য অবশ্যই আপনি কাঁচের বয়োম এ সংরক্ষণ করে রাখবেন।
  • নিমপাতা এবং প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো একসঙ্গে মিশিয়ে বেটে তারপর ছোট ছোট আকারে রোদে শুকিয়ে রাখলে আপনি অনেক দিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
  • নিম পাতা সংরক্ষণের সময় আপনারা অবশ্যই যে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন সেটি হল শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থানে রাখতে।

ওপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি অনেকদিন নিম পাতা খুব সহজেই সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনি নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব নিমপাতার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।

নিম পাতার অপকারিতা কি

নিম পাতা সেবনে যেমন আমাদের উপকারিতা হয় ঠিক তেমনি আবার নিমপাতা সেবনে আমাদের কিছু অপকারিতাও হয়ে থাকে। কিন্তু নিম পাতার উপকারিতাই বেশি থাকে অপকারিতার থেকে। আপনারা অবশ্যই মনে রাখবেন যে নিম পাতা সেবনে এমন কোন তীব্র পার্শ্বপ্রতিকরা বা অপকারিতা নেই যাতে খুব সর্তকতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। তারপরেও নিম পাতা খাওয়ার কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তো চলুন নিম পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নেই-

  • গর্ভবতী সময়ে নিমপাতা একেবারেই সেবন করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে আপনার সন্তানের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • মাত্রা অতিরিক্ত নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনার পাকস্থলী বা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • খালি পেটে অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে স্টোমাটাইটিস এর মত এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  • খালি পেটে দীর্ঘদিন নিমপাতা খাওয়ার ফলে আপনার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
  • যারা নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য নিমপাতা খাওয়া একেবারেই উচিত না। কারণ নিম পাতার রস উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • অতিমাত্রায় নিম পাতার রস সেবন করার ফলে ডায়রিয়া, মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • সাধারণত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে নিম পাতার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না তবে শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার বিষক্রিয়া ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য শিশুদের নিম পাতা রস খাওয়ানোর আগে অবশ্যই পরিমাণ মতো এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
  • নিম পাতার রসে সক্রিয় যৌগ উপাদান এজারডিরাক্তিন থাকার ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

প্রিয় পাঠক আপনারা অবশ্যই জানেন যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই নিম পাতা সেবনের ক্ষেত্রেও আপনারা অবশ্যই সঠিক পরিমাণে ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেবন করবেন। এবং গর্ভবতী সময়ে কখনোই নিম পাতার রস সেবন করতে যাবেন না।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখক এর মন্তব্য

আপনি যদি আর্টিকেলটি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন। তাহলে আমি আপনাকে ১০০% গ্যারান্টি সহকারে বলতে পারি যে, নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক নিম গাছ এমন একটি ওষুধি গাছ যার শিকড়, পাতা, ছাল, ফুল এবং ফল সবগুলোই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা

এবং প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ইউনানী এবং কবিরাজি চিকিৎসায় নিমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এ আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন এবং এ আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনার সে মূল্যবান মতামতটি আমাকে জানাবেন। এবং এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য অবশ্যই আপনি রেইন ওয়েব জোনের সাথেই থাকবেন।। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেইন ওয়েব জোনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।কারণ প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url